নিগৃহীতা

আমি ক্ষুধার্ত। তুমি ক্ষুধার্ত ,আমরা সবাই ক্ষুধার্ত। আমাদের সবার ক্ষুধা মেটানোর জন্য আমি নিজেকে বিনিয়োগ করে চলছি ,আমাদের সকলের পাকস্থলী আমাকে চায় ,আমাকে তারা খুব ভালোবাসে ,তাদের ভালোবাসার তাড়নায় আমি তোমাকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে পারিনা ,যত্ন করতে পারিনা। আমি অসহায় শুধু তাই নয় নিজেকে নিয়োগ করেও আমি সবার চাহিদা পূরণ করতে পারছিনা কিন্তু তবুও আমি ক্ষুধা মেটানোর ভগবান ,ওই ওপরের ভগবান থাকলেও পৃথিবী আমাকে স্বামী ভগবান নাম এ দায়বদ্ধ করেছে। স্ত্রীর ক্ষুধা আর চাহিদা মেটানোর জন্য আমি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার মস্তিস্ক আর হাত গুলোকে পাকস্থলীর ক্রীতদাস করে রাখি। তোমার কোনো সোশ্যাল মিডিয়া সেই খবর রাখে না ,তোমার স্টেটাস এ সেই খবর থাকে না ,যদিও তোমাকে নিয়ে আমার গর্বের অন্ত নেই তবে তোমার সোশ্যাল মিডিয়া তে প্রবেশ করবার সৌভাগ্য আমার হয়নি , তবে কোনো মিডিয়া এর ক্ষমতা নেই যে আমার রাত আর দিনের হিসাব করে স্টেটাস দিতে পারে কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা আছে একটা স্বপ্নের নীড় ভেঙে দেবার। যখন আমি কাজের চাপে আবদ্ধ ,হৃদয় বাদে আমার চোখ , মস্তিস্ক ,হাত সবই পাকস্থলীর নির্দেশে চলতে বাধ্য হচ্ছে তখন তো আমি তোমার মনের, মনের মত যত্ন করতে পারিনা ,আমি অসহায় ,দুর্বল আছি সত্যি কিন্তু কে জানে যে প্রিয়জনেরা ও ভাইরাসের মতো আমার দুর্বলতার সাথে পাঞ্জা লড়বে। আমি পরিস্থিতির পাল্লায় পড়ে সময় বের করতে পারছিনা। এটা ছিল আমার যন্ত্রনা ওদিকে তুমি তোমার প্রচুর সময় কাকে দেবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলে না , ওটা ছিল তোমার যন্ত্রনা ,দুই বিপরীত মুখী যন্ত্রনায় আমার বিদ্ধ তবে আমি বুঝেও নিরুপায় ছিলাম আর তুমি বুঝে কিছু একটা উপায় বের করলে ,ব্রম্মার মতো সৃষ্টি করলে আর এক পৃথিবী যেখানে স্বাভাবিক ভাবেই আমার প্রবেশ নিষেধ থাকবার কথা। একাকী থাকলে ভগবান ও আনন্দ পায়না তাই লীলা রসের জন্য মিত্র , বন্ধু ,,ভাই, দাদা এসবের থেকে এড়িয়ে যাওয়া যায়না। আমার থেকে গোপন করে রোপন করা ওই বিষ বৃক্ষ ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো ,একদিন চোখে পড়লো তার একটা বিষ ফল , আমি তোমাকে সময় দিতে পারিনি তাই তুমি অভিমান করে তুমি সোশ্যাল মিডিয়া তে নিজেকে সামিল করেছো এটাই ছিল তোমার জবাব। এটা নাকি আমার প্রতি তোমার ক্রোধের ফসল। এতটাই ক্রোধ যে তুমি মাত্র একা জন্ম দিয়েছো এক বীরভদ্র কে যা আমাদের দুই জনের জন্ম দেওয়া প্রেমের জগৎ কে এক সেকেন্ডে ভেঙে দিতে পারে।তুমি এটা একবার ও ভাবলে না এভাবে অনেক মাস বছর হয়ে গেল কিন্তু আমরা তবুও চলছি অর্ধনারীশ্বর হয়ে ,অভিমান বা ক্রোধ তো আর থাকার কথা নয় কিন্তু তাও পাশে পাশে চলছে সেদিনের বীরভদ্র , দিনে দিনে বড় হচ্ছে বিষ বৃক্ষ। আসলে তুমি কি আর জানতে যে অভিমানের ফসল ও এতো দরকারি হয়ে উঠতে পারে, যে আমাকে পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে , তোমার সৃষ্টি আর আমাকে নিয়ে যেদিন দর কষা কষি হয়ে গেলো সেদিন বুঝলাম ভগবান ও কেন তার সৃষ্ট দানব কেও তার নিজের হাতে মারতে পারে না ,সেই বিষ বৃক্ষ উৎপাটন করতে গেলেও ভগবান কে ও পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন ভাব ও ভিন্ন রূপ অর্জন করতে হয় ,তারপর তাকে ধংস করা যায়। ব্রম্ম্হা কখনো নিজের সৃষ্টি ধ্বংস করতে পারেনা ,ধ্বংস করতে হলে তাকে রুদ্র রূপ নিতে হয়। আমার আকুল আবেদনে ,চোখের জলে তুমি দয়া না করে বিরক্ত হয়ে উদ্যত হয়েছিলে তোমার স্বকীয় জগৎ ধ্বংস করতে কিন্তু তোমার রূপ দেখে আমি এতো ভীত হয়ে গেলাম যে তোমার পরিবর্তিত ভাব দেখে আমি চেতনা হারাতে বসলাম,কি বিচিত্র হতে পারে নারীদের রূপ ! রাধিকা থেকে ছিন্ন মস্তা হয়ে গেলে নিমিষে ,আগে আমার সাথে নিজের সম্পর্ক এ ছিন্ন করে তারপর তোমার সৃষ্টি কে ছিন্ন করতে উদ্যত হলে , কি ভয়ঙ্কর ,বীভৎস রূপ আর ভাব ,প্রথমে নিজেই নিজের সম্পর্কের ছিন্নতা করতে গেলে তারপর বাকিটা , এই রকম অবস্থা তে আমি আত্ম সমর্পন ছাড়া কোনো উপায় দেখলাম না আর আজকে তার জন্যই তো তার বিনিময়ে তোমাকে পুরোনো রূপে দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে ,এর পর থেকে আর তোমার সৃষ্টির ধ্বংস কামনা করিনি ,সাহস পাইনি তো ,তাই ,কামনা করেছি যেন তোমার সব কিছুই কেই ভালোবাসতে পারি ,তোমার বীরভদ্র হোক আমার উপাস্য বন্ধু ,তোমার বিষ বৃক্ষ হোক আমার কল্পতরু ,তোমার বিষ ফল হোক আমার অমৃত ভান্ডার। সেই থেকে তোমার সৃষ্টির সাথে নিজেকে মিলাতে চেয়েছি কিন্তু আমার আকুলতা ,আমার আগ্রহ তোমাকে নিগ্রহ করে ,আমার আগ্রহ প্রকাশ করে ,অনেক দেখেছি তোমার প্রলয়ঙ্করী রূপ,আমার আগ্রহ অসুর যতদিন থাকবে ততদিন তোমার এই রূপ আমাকে বার বার দেখতে হবে ,তাই ভয়ে ভীত হয়ে ,হতাশ হয়ে তোমার সৃষ্টির প্রতি আমার সব আগ্রহ -অভিলাষ -আকুলতাকে শ্বাস রোধ করে মেরে দিলাম ,যেহেতু কোনো রক্ত পাত ঘটেনি সেদিন ,তাই বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে না যে ওরা মরে গেছে ,ওরা আমার বুকে মাথা গুঁজে ঘুমিয়ে আছে। ওরা তোমাকে বিরক্ত করেছে ,তোমাকে উত্যক্ত করেছে ,তোমার ভাব ও রূপ কে নষ্ট করেছে , ওরা ভেবেছিলো তুমি এতে গর্বিত হবে ,কিন্তু কে জানতো তুমি গর্বিত না হয়ে নিগৃহীত হতে পারো। তোমার সব কিছুর প্রতি আমার তীব্র আকুলতা আর আমার আকুলতার প্রতি ই তোমার তীব্র ঘৃণা।যদিও তুমি সৎ তবে তোমার সৃষ্টির জগতের ,তোমার মনের জগতের সাথে আমার আকুলতার অংশীদারিত্ব করতে ভয় বা দ্বিধা বোধ কর কারণ তুমি দুর্বল ,আমিও পাকস্থলীর দাসত্ব করে দুর্বল হয়ে আছি তাই আর এক দুর্বলের ব্যথা আমি খুব বুঝি ,তোমার জীবনের ,মনের কিংবা সৃষ্টির ওপর প্রভুত্ব বা স্বামীত্ব ফলাবো না তোমার ক্ষুধা মেটানোর স্বামী হয়ে থাকলাম। তোমাকে সময় দিতে না পারা টা আমার অক্ষমতা বা আমার ভুল মনে করে ,আমি তোমার অভিমানের সৃষ্টি কে গনেশের মতো সবার আগেই পূজা করি , ,আমি বন্দনা করি তোমার না বলা বা এড়িয়ে যাওয়া গোপনে সংরক্ষিত সৃষ্টি গুলোকে ,আমি অগ্রিম অভিষেক করছি তোমার বকেয়া সৃষ্টি গুলো কে ,যে সৃষ্টি গুলো আগামী তে প্লাবন বইয়ে দেবে ,আমার আকুল আগ্রহ ,আমার ইন্দ্রিয়গুলো তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের সৃষ্টি গুলোর পরিপন্থী হতে পারে না - এ সকলি মেনে ছি একটা শর্তে, তোমাকে সুখী থাকতে হবে কারণ এতকিছুর পরেও তোমাকে আমি ছেড়ে যেতে পারিনি।
leave a reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *