দ্বিতীয় ভগবানের সৃষ্টিকর্তা

যেখানে যত উদারতা সেখানে ততই নিষ্ঠুরতা দেখা যায়। যিশুখ্রিস্টের প্রতি আমরা নিষ্ঠুরতা কে যেমন জানি তেমনি তাঁর উদারতা কেও সমান ভাবে বোঝা যায় । ভারতীয় দর্শনে নারী কে দেবীরূপে অর্থাৎ শক্তিরূপেণ কিংবা মাতৃরূপেণ রূপে চর্চা করা হয় অন্যদিকে ভারতীয় পৌরাণিক ভাবনায় নারীকে পণ্যের মতো করে , সোজা কথায় বস্তু বা মালের মতো অন্যের কাছে বন্ধক রেখে তার বস্ত্র হরণে ও পুণ্যলাভের যুক্তি খুঁজে পায়। ঐতিহাসিক ভারতের আদিদেব পশুপতি যিনি কিনা এখন কার শিব, সেই মহাযোগী মাথায় করে রেখেছেন সতী কে কিন্তু মানুষের জগতে মানুষ শিবের সতীকে কল্পিত প্রাণ সঞ্চার করে পূজা করে কিন্তু নিজেদের জীবন্ত সতীকে চিতায় পুড়িয়ে প্রাণ কেড়ে নেয় । লিঙ্গ বৈষম্য ,শ্রেণী বৈষম্য যেখানে বেশি আর সেখানেই উন্নত দর্শন গড়ে ওঠার দরকার হয়। এটা আমাদের সেই ভারতবর্ষ যেখানে বলা হয় শাস্ত্র বা ভগবানের থেকে ও সত্য বড় কিন্তু সেখানেই সত্যের বড় আকাল। অপসংস্কার থেকে দুর্নীতি ,জাতি বৈষম্য থেকে শ্রেণী বৈষম্য এখনো এই এন্ড্রোয়েড যুগের সোশ্যাল মিডিয়াতে মশলা যোগায়। ভাগাড় থেকে গোমাতার পঁচা মাংস খেয়ে কাক অবাধে মন্দিরের চূড়ায় বসে শক্তিরূপেণ তথা মাতৃরূপেণ দেবীর ক্রিং ক্রিং মন্ত্র জপ করে যেতে পারে কিন্তু ভাগাড় থেকে আসা মানুষ ( তথাকথিত দলিত শ্রেণী ) মন্দিরে প্রবেশ করা তো দূরের কথা মন্দিরের দেবতা দর্শন করতে পারে না। পঁচা মাংস খেতে অভ্যস্ত প্রকৃতির ঝাড়ুদার কাক যদি ওই মন্দিরের - ভগবানের সৃষ্টি হয় ,তবে মৃত গোমাতাকে ভাগাড়ে বয়ে নিয়ে যাওয়া মানুষ গুলো কি ওই মন্দিরের প্রতিষ্ঠিত ভগবানের সৃষ্টি নয় ? এই অবহেলিত , বঞ্চিত আর নির্যাতিত মানুষের সৃষ্টিকর্তা কি কোনো দ্বিতীয় ভগবান ? এই শোষিত শ্রেণীর দ্বিতীয় ভগবানের সৃষ্টিকর্তা ই হলো শোষক শ্রেণীর মানুষ - যারা ভারতীয় দর্শনের ভোক্তা হয়েও ' একমেবাদ্বিতীয়ম' অর্থাৎ ভগবান এক ও অদ্বিতীয় - এই সত্য কে যেন যুগ যুগ ধরে বিস্মৃত করে রেখেছে। আর এই স্মৃতি ভ্রষ্ট শোষকের জন্য সনাতন ধর্মের সাথে থাকা কোটি কোটি নিষ্পেষিত ফুল দ্বারা অন্য ধর্ম পূজিত হচ্ছে অর্থাৎ নিজেদের ধর্ম ছেড়ে তাদেরকে অন্য ধর্ম অনুসরণ করতে বাধ্য করানো হয় , আজও সেই ধর্মান্তর ধারা অব্যাহত।
leave a reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *